প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকে শুরু হয়েছে তাপদাহ গরম। চলছে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস রমজান। কয়েকদিন পরেই মুসল্লীদের আনন্দের ঈদ। জমে উঠেছে মানুষের কেনাকাটার মহোৎসব। এর কোন কিছুই সঠিকভাবে করতে পারছে না লোডশেডিং কারনে। অন্যদিকে কারেন্ট না থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় হচ্ছে সমস্যা। দাপ্তরিক কাজে ঘটছে ব্যাঘাত। আবার হঠাৎ এই গরমের যন্ত্রণায় শিশু-বয়োবৃদ্ধরা সম্মুখীন হচ্ছে নানান ব্যাধিতে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের জন্য শাল্লার লাখো মানুষের জীবনযাত্রা পড়ছে চরম বিপাকে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। তথ্যে জানাযায়, শাল্লা উপজেলায় বিদ্যুতের দুটি বিভাগের সংযোগ রয়েছে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), অপরটি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (বিপিবিএস)। লোডশেডিংয়ের কারন জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ জেলার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (নির্বাহী প্রকৌশলী) আবু নোমান বলেন, শাল্লার লাইন হচ্ছে অনেক দূর্গম ও দীর্ঘ লাইন। তারপর লাইনে অনেক সময় পাখি বসলে, গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লে এবং পিন ব্রাস্ট হলে ফল্ট খুঁজে বের করার জন্য শাটডাউন দেওয়া হয়। আপনাদের এখানে চাহিদা মনে হয় ৫ মেগাওয়াট আর দিচ্ছে মাত্র ৩ মেগাওয়াট। এইজন্যই ফোর্স লোডশেড অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে লাইন বন্ধ রাখতে হয়। বিশেষ করে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না এর কারন হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম। তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে সোলার নেওয়ার জন্য যাতে দিনে একটা লাইট ও ফ্যান চালাতে পারেন। শাল্লা উপজেলা সদর (ঘুঙ্গিয়ারগাঁও) বাজারের অনেক ব্যবসায়ী জানান, গরম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই কারেন্টের সমস্যা শুরু হয়েছে। এখন পবিত্র রমজান মাস। আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১৫ ঘন্টা কারেন্ট থাকলে চলে। কিন্তু সারাদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭-৮ঘণ্টা থাকে। যা আমাদের ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। ইফতারের সময় প্রতিদিন বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ আসে রাত নয়টার দিকে। রাতের খাওয়া শেষে ১১টার দিকে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেই, এমন সময় আবারও বিদ্যুৎ চলে যায়। রাতে এমন আরও কয়েকবার হয়। এমনকি সেহরি খাবার সময় বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়েছি আমরা। অদ্রিজা ফ্যাশনের সত্বাধিকারী অনীষ চৌধুরী বলেন, আমাদের গার্মেন্টস ব্যবসায় কারেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন রোজা রেখে ক্রেতারা ইফতার করে কেনাকাটা করতে আসে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলে আমরা কিভাবে জিনিসপত্র বিক্রি করব ? কারেন্টের অতিরিক্ত লোডশেডিং করায় ব্যবসা ভাল হচ্ছে না। এইমুহূর্তে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেও মোটামুটি আমাদের চলত। শাল্লার অধিকাংশ গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসহনীয় গরমের মধ্যে বিদ্যুতের সমস্যায় চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান সাধারণ মানুষ। বাজারের মতো গ্রামের অবস্থাও প্রায় একইরকম। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গরম আসার সাথে সাথেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। অনেক এলাকায় দিনের বেলায় অল্পসময় বিদ্যুৎ থাকে। বিকালে কিছু সময় থাকে আবার সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায় এমন লোডশেডিং হলে কেমনে কি করা। আর যদি বৃষ্টি বা হালকা বাতাস দেয় তাহলে এইদিন বা রাত কারেন্টে আরাম পাইলায়। ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় কি ক্ষতি হচ্ছে এগুলো বইলা আর কি করমু। তবে বিদ্যুত অফিসে কল দিলে তারা ধরে না, কল ধরলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখায় কিতা কয় উৎপাদন কম, লাইনে সমিস্যা এই সেই আরও কত কি ! লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেশি হওয়ায় গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। কারেন্ট চলে গেলে গরমের যন্ত্রণায় রাতের বেলা বাচ্চা কাচ্ছা নিয়ে বাইরে আসতে হয় বলে মন্তব্য করেন এলাকার মানুষ। সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিদ্যুৎ লোডশেডিং এর দৃশ্য দেখাযায়। শাল্লার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা যশোবন্ত ভট্টাচার্য জানান, কারেন্ট না থাকায় চিকিৎসা কাজে ব্যঘাত ঘটে। আমাদের এখানে নরমাল ডেলিভারি এবং ভর্তি রোগীেদর জন্য সমস্যা হয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীদের জন্য গরমে মারাত্মক সমস্যা হয়। আমাদের যে আইপিএস আছে এটা দিয়ে কয়েক ঘন্টা সার্ভিস দেওয়া যায়। সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মিলন কুমার কুন্ডু জানান, গ্যাস সল্পতার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কম এটাই হচ্ছে মেইন কারন। বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী আবহাওয়া ঠান্ডা থাকলে বিদ্যুৎ বেশী থাকে, গরম হলে বিদ্যুৎ কম থাকে। আমাদের সুনামগঞ্জ টোটাল চাহিদা ৪৭ মেগাওয়াট আর আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি মাত্র ৩০-৩২ মেগাওয়াট। শাল্লার জন্য কতটুকু বিদ্যুতের চাহিদা বা সাপ্লাই দিচ্ছেন কতটুকু বললে তিনি প্রতিবেদকে জানান, এই মুহুর্তে আমি বলতে পারছি না তবে জেনে আপনাকে জানাতে পারব।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন