বিশেষ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি সেতুর অ্যাপ্রোচ ধেবে গিয়ে উক্ত সড়কে যান চলাচলা বন্ধ হওয়ার আশঙ্খা দেখা দিয়েছে। জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর এলাকায় নাইন্দা নদীর উপর এ সেতুটির অবস্থান। নাইন্দা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সেতুটি এখন হুমকির মুখে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সুনামগঞ্জ অংশে ১৮ কি: মিটারের মাথায় অবস্থিত সেতুটির উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
সুনামগঞ্জ জেলার নয়টি উপজেলার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ রক্ষা করার একমাত্র পথ সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক। এই সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হলে সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে সুনামগঞ্জ জেলা।
এদিকে, বড় ধরণের বিপদ এড়ানোর জন্য সড়কের অ্যাপ্রোচে সাময়িক সংস্কার করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলরা জানান, সেতুটি সংস্কারের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এখানে নতুন আরেকটি সেতু করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর অ্যাপ্রোচের ধ্বস ক্রমশই বাড়ছে। সদরপুর সেতুর লাগুয়া পূর্বপাড়ের উত্তরাংশের কর্নারের নীচ থেকে মাটি ক্ষয়ে একাংশ নিচের দিকে ধেবে গেছে। এর আগে একাধিকবার একই জায়গা ধেবে যাওয়ার কারণে পাথর, বালির বস্তাকে বিটুমিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিলো। সেতুর উত্তর পূর্ব পাড়ের প্রতিরক্ষা দেয়ালকে পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে দুই-তিন ধাপে টানা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও যেনো দেয়ালটি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়াও নাইন্দা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে ভাঙন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। ভাঙনের কারণে দুই পাড়ের বিশটিরও বেশি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছেন, আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্যত্র। এর আগে সেতুর পশ্চিমপাড়ের অংশ ভেঙে যাওয়ায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক ও জনপথের রাতভর চেষ্টায় বেইলি সেতু বসিয়ে স্বাভাবিক করা হয়েছিলো যান চলাচল। এ অংশও যে কোন সময় ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সেতুটি পাড় হবার সময় যানবাহন চালক ও যাত্রীরা ভয়ে থাকেন। কখন ধসে পড়ে যায় সেতুটি।
গত মঙ্গলবার দিনভর সড়ক ও জনপথের লোকজনের তত্বাবধানে ইট-পাথর ও বালুর বস্তা দিয়ে সেতুর ধেবে যাওয়া অংশ আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। বুধবারও সেখানে কিছু কাজ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, এর আগে একাধিকবার এই সেতু ভেঙেছে। যান চলাচল বন্ধ হয়েছে। মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনা থেকে যানবাহন ও যাত্রীরা রক্ষা পেয়েছেন। কিন্তু নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন আরও নাজুক হাল হয়েছে সেতুটির। এখন সেতুর নিচের দিকে তাকাতে ভয় লাগে। বাস বা ট্রাক সেতুর উপরে উঠলে কেঁপে উঠে। স্থানীয়দের দাবি দ্রুত এই সেতুর স্থানে নতুন সেতু স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি। আপাতত সেতুটির আশে পাশে বিকল্প সেতুর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।
উক্ত সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী অরুন পাল বললেন, নদী যেভাবে সবকিছু গিলছে, এভাবে জোড়াতালি দিয়ে সেতুর অ্যাপ্রোচ আটকানো যাবে না।
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে যাত্রী নিয়ে আসা সিএনজি চালক কবির উদ্দিন বললেন, এ সড়কে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। সদরপুর সেতুর কাছাকাছি আসলেই মনে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। কখন জানি ধ্বসে পড়ে সেতুটি। সেতুতে যান নিয়ে উঠলে উঠলে সেতু কাঁপতে শুরু করে। বার বার এই সেতু ভাঙে, আর মেরামত করা হয়। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলতে থাকলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বললেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। সেতুটির দুই পাশ বর্ধিত করার জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর দরপত্রের প্রক্রিয়া চলমান আছে। এছাড়াও এই সেতুর পাশে ১৪০ মিটার দৈর্ঘ্য আরেকটি নতুন সেতুর দরপত্রের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন আছে। একসঙ্গে দুইভাবেই এগুচ্ছি আমরা। এই পথ চালু রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন