শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের ১শত ১০ ঘরের রামেশ্বরপুর গ্রামটির সবারই একমাত্র পিতৃ প্রদত্ত পেশা শীতল পাটি পাটিবোনা। এ গ্রামটি শীতলপাটি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। গ্রামের বেশির ভাগ নারীর জীবন জড়িয়ে আছে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া শীতল পাটিতে। কয়েক’শ বছর ধরে তারা শীতলপাটি, জামদানি, শাদাপাটি, চিকন পাটি, রঙিন পাটি বুনেই সংসার চালাচ্ছেন। এই গ্রামের নারীদের হাতে তৈরী শীতল পাটির সুনাম দেশব্যাপী সমাদৃত। একসময় ঈদে পূজোয় শীতল পাটির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখন তা কমে গেছে। গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, এই গ্রামে সাধারণত শীতলপাটি, জামদানি, শাদাপাটি, রঙিন পাটি ও চিকন পাটি বোনা হয়। একটি পাটি বোনতে ৩-৪ ফন মুর্তা লাগে। প্রতিটি ফনে ৮০টি মুর্তা থাকে। একটা সাধারণ পাটি বোনা শেষ করতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগে। সাধারণ পাটির দাম ৭শত থেকে ৮ শত টাকার মধ্যে। শীতল পাটি তৈরী করতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে, খরচ বেশি হয়, এজন্য বেশি দামেও বিক্রি করতে হয়। অনেক সময় সুষ্ঠু বাজার জাতের অভাবে তারা প্রকৃত মূল্য পাননা। পুঁজি না থাকায় ব্যবসারও প্রসার ঘটছেনা বলে তারা জানান। সরেজমিনে রামেশ্বরপুর ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের স্কুল পড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে সকলে পাটি বানানোর কাজ করেন। পাটি বুননের কাজ নারীরা সাধারণত গোল হয়ে বসেন, নিজেদের বসত ঘরের বারান্দায় বা উঠানে বসে পাটির কাজ করেন। পাটি তৈরিতে নারীদের সহযোগিতা করে থাকেন পুরুষরা। পাটি তৈরিতে পুরুষগণ বেতি (পাটি বানানোর বেত) তোলার কাজ করেন। নারীরা বুননের মধ্য দিয়ে পাটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন। পাটি বুননের আগে বেত রং করার মাধ্যমে পাটির নানা নকশার কাজ করে নারীরা। এতে সুন্দর হয়ে উঠে পাটি। শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন রামেশ্বর পুরের পাইটালরা। শীতল পাটির চাহিদা কমে যাওয়ায়, এই অভিজাত পাটিও কম তৈরি করছেন পাইটালরা। পাটিশিল্পীরা বলেন,বাজারে প্লাস্টিকের অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়ায় আগেরমত শীতল পাটি কিনতে আসে না ক্রেতারা। সুচিত্রা বালা দত্ত নামের আরেক পাটিশিল্পী বলেন, ৩০ বছর ধরে পাটি বানানোর কাজ করছেন তিনি। বছর দশেক আগে শীতল পাটির চাহিদা যেমন ছিল, এখন সেভাবেই নেই। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন বলেন, রামেশ্বরপুর গ্রামটি একটি ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটির গ্রাম। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই হতদরিদ্র। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পিছিয়ে আছেন তারা। ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন,ইতিমধ্যে রামেশ^রপুর গ্রামের মহিলাদের শীতল পাটি বুননে আগ্রহী ও উৎসাহিত করতে মাসব্যাপী ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ট্রেনিং ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন