প্রতিদিন প্রতিবেদকঃ সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর বালিপাথর মহালটি যূগযূগ ধরে জেলার সর্ববৃহত ফাজিলপুর পাথর কোয়ারী নামেই পরিচিত।জানাযায় বিগত ০৯/০২/২৩ ইং সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় আগামী ১৪৩০ বাংলা সনের জন্য ২০১০/২০১১ইং মাটিবালু আইনে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।এই নদীর ১৪২৫-১৪২৬ বাংলা সনের বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত বালিমিশ্রিত পাথর হিসেবে জনৈক সাবেক একজন ইজারাদার ফেরদৌস আলম জেলা প্রশাসক বরাবরে বিগত ১২/০২/২৩ইং তারিখে একখানা আবেদন করেন।আবেদনকারী ৯ই ফেব্রোঃ প্রকাশিত বিজ্ঞাপ্তিতে যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল দুটির ক্ষেত্রে ১৯৯২ সনের খনিজ সম্পদ আইনকে উপেক্ষা করে ২০১০/২০১১ মাটিবালু আইন প্রযোজ্য নয় মর্মে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটি বেআইনি বলে সৃজিত মহালের ইজারা বাতিল চেয়ে সঠিক আইনে ইজারাদানের জন্য উল্লেখ করেন।আবেদনে মহালটি বালিমিশ্রিত পাথর কোয়ারী হিসাবে ইজারা প্রদান করা হলে সরকার আরো দ্বিগুণ তিনগুণ বেশী রাজস্ব পেত বলে উল্লেখ করেন। জেলা প্রশাসন ইজারা কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে জনাব ফেরদৌস আলম মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রীট নং-২১৭০/২০২৩ মোকদ্দমা দায়ের করেন।আদালত ২২/০২/২৩ ইং তারিখে ২ মাসের রোল এবং আবেদনটি ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দেন
।পরবর্তীতে ১২/০৩/২০২৩ ইং তারিখে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জনাব কামরুল কাদের ও মোহাম্মদ আলীর দৈত বেঞ্চ যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ এর সকল প্রকার ইজারা কার্যক্রম ৩ মাসে স্তগিত রায় দেন।জেলা প্রশাসন বিগত ০৩/০৪/২০২৩ ইং তারিখে চেম্বার জাজ্ বিচারপতি জনাব এনায়েতুর রহীমের কোর্টে ১২/০৩/২০২৩ ইং তারিখে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ টি পূনরায় স্তগিত করে শুনানীর জন্য সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে দেন।জেলা প্রশাসন প্রকাশিত বিজ্ঞাপ্তির ১ম পর্যায় ০২/০৩/২৩ ইং তারিখে সর্বোচ্ছ দরদাতা সোহাগ এন্টারপ্রাইজ(যাদুকাটা-১ =২৫,৭৫০০০০০/-) ও মেসার্স আরাফ ট্রেড কর্পোরেশন (যাদুকাটা-২ =৪২,৯০,৫০,০০০/-) সর্বমোট দুই মহালের সর্বমোট ইজারা মূল্য ৬৮,৬৫,৫০,০০০/-টাকা,যাহা এযাবত কালের সর্ববৃহত রাজস্ব।অনেকেই মনে করেন উক্ত কোয়ারী বালিমিশ্রীত পাথর মহাল হিসাবে ইজারা হলে রাজস্ব কয়েকগুণ বেশী হতো।১৯৯২ ইং সনের আইনে বলা আছে দেশের সকল খনিজ সম্পদ তদারকির দায়িত্ব বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের।
ভূমির মালিকানা যাহারই থাকুক কেন,খনিজ সম্পদের মালিকানা একচ্ছত্র সরকারের তথা খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের। এছাড়াও নদীর কোন এলাকায় পলিমাটি পড়ে নাব্যতা সংকট দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ২০১০-২০১১ইং মাটিবালু আইনে কয়েকটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বালুমহাল সৃজন করে ইজারার আওতায় আনতে পারেন।আইনে বলা আছে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট উপজেলার এসিল্যান্ড ও সার্ভেয়ার সরজমিনে তদন্ত মাপজোখ করে প্রতিবেদন দিবেন।যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল সৃজনের ক্ষেত্রে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ ০৮/০৮/২০১৮ইং তারিখে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরজমিনে প্রতিবেদন দানের জন্য পত্র দেন।তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসের স্মারক নং- ১৪৪৬ তাং০১/১১/২০১৮ খ্রীঃ প্রতিবেদনে তাহিরপুর উপজেলার সার্ভেয়ার হযরত আলী ও ইউনিয়ন তহশিলদার আশীষ কুমার চক্রবর্তী ২৭/০৯/২০১৮ ইং তারিখে সরজমিনে তদন্ত করেন।তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যাদুকাটা নদীতে অসংখ্য লোক নুরীপাথর/মোটা বালু উত্তোলন করছে।
নদীর অধিকাংশ এলাকা খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো কতৃক ইজারাকৃত।বাকী অল্প এলাকা ইজারাহীন আছে,যাহা সরকার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন।প্রতিবেদনে বাকী এলাকা সমূহ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর(বিএমডি)কতৃক গেজেট ভূক্তি করে বিএমডির মাধ্যমে ইজারা প্রদানের জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।২০১০-২০১১ আইনে বালুমহাল সৃজনের ক্ষেত্রে নদীর নির্দিষ্ট এলাকাটি বাংলাদেশ আভ্যন্তরীন নৌপরিবহন সংস্থা(BIWTA) কতৃক হাইড্রোগ্রাফি জরীপের প্রতিবেদন আবশ্যক রয়েছে।জনাব ফেরদৌস আলমের আবেদনে উল্লেখ রয়েছে BIWTA তে তথ্য অধিকারে চাহিত পত্রে সংস্থা জানান যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল সৃজনের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার হাইড্রোগ্রাফি জরীপ হয়নি এবং জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ চাননি।আবেদনকারীর উল্লেখ করেন বিগত বছর ৪সেঃ২০২২ খ্রীঃ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের টি শাখা হইতে জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ কে পত্রদিয়া জানান যে হাইড্রোগ্রাফি জরীপ ব্যতীত যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহালের কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।
এখন প্রশ্ন হলো এতসব আইনগত জঠিলতা রেখে কেন এই ইজারা কার্যক্রম? খোঁজ নিয়ে জানা যায় যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল ইজারা নিয়ে বালুর সাথে প্রতিদিন বিপুল পরিমান পাথর উত্তোলিত হচ্ছে ।এতে সরকারের বিশাল অংকের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন