
মোশাহিদ আহমদ,দিরাই:
বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে মোমবাতি ও টর্চের আলোই তখন ভরসা রোগীদের। ভ্যাপসা গরমে প্রসূতি মা, নবজাতকসহ ভোগান্তির শিকার হন হাসপাতালে অবস্থানকারীরা। অন্ধকারে ব্যাহত হয় চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালের একমাত্র জেনারেটরটি ১৫ দিন ধরে বিকল অবস্থায় পরে থাকায় এ দশা চলছে। সাত বছর আগে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালের নতুন তিনতলা ভবনের দোতলায় রয়েছে প্রসূতি ওয়ার্ড। সরজমিন দেখা যায়, ওই ওয়ার্ডের শৌচাগারগুলো ময়লা আর্বজনায় ব্যবহার অনুপযোগী। হাত, মুখ ধোয়ার বেসিনের উপর রাখা কমোড পরিস্কারের ব্রাশ। ময়লায় ঠাসা বেসিনগুলোতে নেই পানি। হাসপাতালের পুরোনো ভবনের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোরও বেহাল দশা। করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রবেশদ্বারসহ যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনার ছড়াছড়ি। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা জানালেন পানির কলগুলোতে পানি থাকে না। পানির অভাবে প্রসূতি, গর্ভবতী ও বয়স্কদের সিড়ি বেয়ে অনেকটা পথ মাড়িয়ে পুরোনো ভবনে আসতে হয় টয়লেট ব্যবহারের জন্য। অপরিচ্ছন্ন ও নি¤œমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করেছেন রোগীরা। জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে এমনিতেই বেহাল হাসপাতাটিতে বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা মড়ার ওপর খড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে সেবাগ্রহীতাদের কাছে।
দিরাই পৌর সদরের ভরারগাঁও গ্রামের রাতিক মিয়ার স্ত্রী আলেয়া বেগম পুত্রবধূকে নিয়ে প্রসবকালীন সেবার জন্য হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, কারেন্ট গেলে আন্দাইর অই যায়। বাথরুমে পানি থাকে না। প্র¯্রাব-পায়খানার প্রয়োজনে নিচে নাইম্মা পানি আনা লাগে। আর না হলে নিচে ওই বিল্ডিংয়ের (হাসপাতালের পুরোনো ভবন) বাথরুমে যাওয়া লাগে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা ভবন তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয় দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নামে ৫০ শয্যা হলেও ৩১ শয্যার লোকবলও নেই এখানে। এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রামসহ কোনো পরীক্ষা হয় না। নেই অস্ত্রোপচারের সুবিধা। এক্সরে মেশিন দীর্ঘ কয়েক বছর বছর ধরে অকেজো।
দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইয়াসিন আরাফাত বলেন, যথাযথ জনবল না থাকায় হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনায় বেশ বেগ পেতে হয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, হাসপাতালের এসি, আইপিএস, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি চালাতে ২২০ ভোল্টের বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে ৯০ ভোল্ট সরবরাহ হয়। লো-ভোল্টেজের কারণে পানির পাম্প পুড়ে যায়। তখন আমাদের কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন, আমরা এমপি মহোদয়ের সাথে দেখা করে বিদ্যুতের সমস্যার বিষয়টি জানিয়েছি। বিদ্যুৎ বিভাগ শীঘ্রই ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে দিবে।