1. newsjibon@gmail.com : adminsp :
মরণোত্তর দেহদান সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা - সুনামগঞ্জ প্রতিদিন
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৫ অপরাহ্ন

মরণোত্তর দেহদান সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা

সুনামগঞ্জ প্রতিদিন ডেস্ক
  • বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ২০২ বার পঠিত
মরণোত্তর দেহদান সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা
Spread the love

যা কিছু কল্যাণকর তা-ই ধর্ম। ধর্ম একে অপরের প্রতি দয়া, মায়া ও ভালোবাসতে শেখায়। একজন মানুষ সে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন, কোনো ভাবেই সে যেন একে অপরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বরং কল্যাণ লাভ করে এটাই ধর্মের শিক্ষা। মানুষ একে অপরের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই মরণোত্তর দেহদানও এমনই একটি কল্যাণকর কাজ।

আজ থেকে হাজার বছর আগে যা মানুষের কল্পনায়ও ছিল না আজ তা মানুষের হাতের মুঠোয় এসে গেছে আর এখন ভাবছে যে এসব বৈধ না অবৈধ। আল্লাহ তাআলা তো এমন নয় যে, তিনি যে দেহ দান করেছেন তা ছাড়া অন্য দেহ বানাতে পারবেন না বা এই দেহের ওপরই তার বিচার করতে হবে। কোনো দুর্ঘটনার কারণে যদি কারো দেহ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে দেহের কোনো অংশ না পাওয়া যায়, তাহলে কি এ ব্যক্তির কাছ থেকে আল্লাহ তাআলা হিসাব নেবেন না? বাহ্যিক দেহের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার হিসাব নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে আল্লাহ পাকের কাছে চলে যায়; তখন দেহ তার কাছে যায় না বরং যায় আত্মা। আমরা কেবল দেহ ত্যাগ করি। আর দেহকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানানোর শিক্ষা এ জন্যই দেওয়া হয়েছে, যাতে আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির কোনো ধরনের অমর্যাদা না হয়।

এছাড়া দেহকে যদি সুন্দরভাবে দাফন করা না হতো, তাহলে পরিবেশও দূষিত হতো। ইসলাম যেহেতু পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, তাই এর শিক্ষাও পরিপূর্ণ। এছাড়া পবিত্র কোরআনুল কারিমে এ বিষয়ে বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে, আমাদের দেহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলেও তিনি তা একত্র করতে সক্ষম এবং তা তিনি করবেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা বলে, আমরা যখন হাড়গোড়ে পরিণত হব এবং চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাব; এরপরও কি সত্যিই এক নতুন সৃষ্টির আকারে আমাদের পুনরুত্থিত করা হবে? তুমি বল, তোমরা পাথর বা লোহা হয়ে গেলেও কিংবা তোমাদের বিবেচনায় এর চেয়েও কঠিন সৃষ্টিতে পরিণত হলেও তোমাদের পুনরুত্থান অবশ্যম্ভাবী। এতে তারা অবশ্যই বলবে, কে পূর্বাবস্থায় আমাদের ফিরিয়ে আনবে? তুমি বল, যিনি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন, তিনিই। তখন তারা তোমার উদ্দেশ্যে মাথা নাড়িয়ে বলবে, এমনটি কখন ঘটবে? তুমি বল, এমনটি অতি শিগগিরই ঘটতে পারে। যেদিন তিনি তোমাদের আহ্বান করবেন, এরপর তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে চলে আসবে। আর তোমরা অনুমান করবে যে, সামান্য সময়ই অবস্থান করেছিলে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ৪৯-৫২)

এছাড়া আমাদের চোখ, কান, হৃদয় সবই তো আল্লাহর সৃষ্টি। তাঁর সৃষ্ট দেহের অংশ দিয়ে তাঁর আরেক বান্দার উপকার করতে কে বাধা দেওয়ার অধিকার রাখে? এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘আর তিনিই তোমাদের জন্য কান, চোখ এবং হৃদয় সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর না বললেই চলে। আর তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের বীজরূপে বপন করেছেন এবং তারই দিকে তোমাদের একত্র করা হবে। তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। আর দিন-রাতের পরিবর্তন তাঁরই কাজ। তবুও কি তোমরা বুঝবে না? (সুরা মুমিনুন: আয়াত ৭৮-৮০)

তাই আমাদের দেহের কোনো অংশ কারো কল্যাণের জন্য দান করলে আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্ট হবেন না। কারণ তিনি আবার সব কিছুই একত্র করতে পারেন এবং করবেন। আর একজনের অঙ্গ আরেক জনের মধ্যে যে প্রতিস্থাপন করা হবে, তা-ও উঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে তা উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আপন শক্তির প্রকাশ করতে সে এক ব্যক্তিকে হত্যা করবে এবং পুনরায় জীবিত করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই ভবিষ্যদ্বাণী কি আজ অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়নি? আজ আমরা কী দেখছি, চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের হৃৎপিণ্ড কেটে বের করে রোগীর রক্তবাহী শিরাকে কৃত্রিম যান্ত্রিক হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে রোগীর আসল হৃৎপিণ্ডকে অপারেশনের মাধ্যমে গ্লানিমুক্ত করে যথাস্থানে স্থাপন করে রোগীকে পুনর্জীবিত ও সুস্থ করছেন। অপারেশন অবস্থায় রোগী জ্ঞানহারা মৃতবৎ পরে থাকে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা সদ্য মৃত ব্যক্তির সুস্থ হৃৎপিণ্ডকে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সংযোজন করে তাকে সুস্থ করে তুলছেন।

এ ধরনের ব্যবস্থাপত্র যে পৃথিবীতে একসময় হবে তার ইঙ্গিত ১৪শ বছর আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে দিয়েছেন। ইসলামে যদি এসবকে অবৈধ আখ্যায়িত করা হতো, তবে তিনি অবশ্যই আমাদের এসব থেকে বিরত থাকতে বলতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মহাবিজ্ঞানী, তিনি জানতেন একসময় বিজ্ঞান উন্নতি করবে আর একের অঙ্গ আরেক জন প্রতিস্থাপন করে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের যেসব অসাধারণ উন্নতি হয়েছে, তা কি আমাদের জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ অনুগ্রহ নয়? আমার মৃত্যুর পর আমার দেহের কোনো অঙ্গ যদি আরেক জনের দেহকে সুস্থতা দানে সক্ষম হয় এবং সে সুস্থ হয়ে মানুষের জন্য কল্যাণে পরিণত হয়, এটা কি আমার জন্য পাপ হবে? বরং এটা আমার জন্য সদকায়ে জারিয়া সমতুল্য পুণ্যও হবে। আর এই সদকায়ে জারিয়া এমন হবে যার পুণ্য চলতে থাকবে।

সুতরাং মরণোত্তর দেহদানের মূল উদ্দেশ্য হতে হবে পুণ্য অর্জন করা। দেহকে যদি গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয় তা-ও পুণ্য হবে। আল্লাহ মানুষের নিয়ত দেখেন যে, কে কোন নিয়তে মরণোত্তর দেহদান করছেন। নিয়ত যদি সৎ হয় তবে আল্লাহ তার প্রতিদান দেবেন আর অসৎ নিয়তে দান করলে নিয়ত অনুযায়ী সে প্রতিদান পাবে।

তাই যাদের ধারণা, মরণোত্তর দেহদানের অনুমতি দিলে মানুষ পাচার ও লাশ চুরির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এটা মোটেও ঠিক নয়। কেননা চুরি-ডাকাতি, হত্যা এসব চলতেই থাকবে, তাই বলে কোনো পুণ্যের কাজকে অবৈধ বলে আখ্যা দেওয়া ঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছে করলে সব দেহকে একটি খণ্ডে সৃষ্টি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে দেহকে ভিন্ন ভিন্ন খণ্ড-বিখণ্ডে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। যেন দেহের একটি খণ্ড নষ্ট হলে তার চিকিৎসা করে এটিকে সুস্থ করে তোলা যায়।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্যের শিক্ষাও দিয়েছেন এবং রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো কোনো অসুস্থতা দেখলে চিকিৎসাপত্র দিতেন। তাই কারো দেহের কোনো অংশ অকেজো হয়ে গেলে তিনি যদি কারো দান করা অঙ্গ ব্যবহার করে সুস্থ হয়ে ওঠেন, এ ক্ষেত্রে আল্লাহ পাকের কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে বলে আমার জানা নেই।

তাই যে কোনো বিষয়কে অবৈধ আখ্যা দেওয়ার আগে ভেবে দেখতে হবে এ সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুলের শিক্ষা কী ছিল? যিনি প্রকৃত ইসলামের অনুসরণকারী; তিনি সব সময় সবার কল্যাণ কামনা করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অন্যের উপকার সাধনে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Spread the love
এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন

© All rights reserved © সুনামগঞ্জ প্রতিদিন
Theme Customized BY LatestNews
error: Content is protected !!