চলতি সপ্তাহে সুনামগঞ্জে ও সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বাড়বে নদ-নদীর পানি। উজানের পাহাড়ি ঢল নেমে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাসের কথা জানিয়ে হাওরের বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাউবো কর্মকর্তাদের ভাষ্য, শুধু ধান কাটা নয়, মাড়াই করা ধান ও ধানের খোলায় রাখা শুকনো খড়ও রাখা যাবে না। সব নিরাপদে নিয়ে রাখতে হবে। জমিতে পাকা ধান রাখা মানেই ঝুঁকি। তাই দ্রুত ধান কাটা শেষ করতে হবে। এমন পরামর্শ পেয়ে কৃষকেরা হাওরের ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলছেন। কয়েক দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুবিধা হয়েছে। সারা দেশে তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় কৃষকদের জন্য তা অনেকটা আশীর্বাদের মতোই। রোদ বেশি থাকায় হাওরে ধান কেটে, সেখানেই মাড়াই ও শুকানোর কাজ সেরে ফেলছেন তাঁরা। এই সময় বৃষ্টি মানেই বিড়ম্বনা। এতে ধানকাটা, মাড়াই ও শুকাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ও উজানের মেঘনা অববাহিকার স্থানগুলোতে সামগ্রিকভাবে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ৬ মে পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। এতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাওরে বুধবার পর্যন্ত ৮৪ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো আবাদ দুই ভাগে বিভক্ত। একটা হলো গভীর হাওর, বাকিটা হাওরের উঁচু অংশ (নন হাওর)। এবার জেলায় মোট বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬১ হেক্টর এবং হাওরের বাইরে ৫৮ হাজার ৪৬ হেক্টর। আবহাওয়া–সম্পর্কিত বার্তা বিবেচনায় নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি আজ বৃহস্পতিবার বিশেষ সভা আহ্বান করেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পূর্বাভাস জেনেই এই সভা আহ্বান করা হয়। জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরপারের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ ৮০ ভাগ ধান ঘরে তুলে ফেলেছেন। বন্যা হতে পারে এই আতঙ্কে সবাই দ্রুত ধান কাটার কাজ করছেন। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছি। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছি। পাকা ধান জমিতে রাখা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। এখন যেকোনো সময় আবহাওয়া পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, উজানে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হলে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নামে। এতে হাওরে পানি বৃদ্ধি পায়। যেহেতু সুনামগঞ্জ ও উজানে দুই জায়গাতেই অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস আছে, তাই এ সময় বন্যার আশঙ্কা আছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেছেন, হাওরে আর ধান রাখার কোনো সুযোগ নেই। সব ধান দ্রুত কেটে শেষ করতে হবে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮৪ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। তবে হাওরে অল্প কিছু জমিতে ধান আছে। এগুলো আজকালের মধ্যে লোকজন কেটে ফেলবেন। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা নির্বিঘ্নে তাঁদের ধান গোলায় তুলেছেন। এতে তাঁরা খুশি। হাওরে কৃষকেরা যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে ধান তোলার কাজটি করছেন, আশা করছেন আর কোনো ক্ষতি হবে না।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন