1. newsjibon@gmail.com : adminsp :
শান্তিগঞ্জে হাঁস পালনে ভাগ্য বদল খামারিদের - সুনামগঞ্জ প্রতিদিন
সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

শান্তিগঞ্জে হাঁস পালনে ভাগ্য বদল খামারিদের

  • শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১১ বার পঠিত
Spread the love

নোহান আরেফিন নেওয়াজ, শান্তিগঞ্জ : সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় হাওর, খাল, বিল, ডোবাতে হাঁস পালন করে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে খামারিদের। এতে কর্মসংস্থান তৈরী হচ্ছে বেকার নারী-পুরুষের। এ খামারিদের সাফল্যে অন্যরাও উৎসাহিত হয়ে গড়ে তুলছেন ছোট-বড় খামার। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে খামার ও খামারির সংখ্যা। খামার পালিত হাঁসের মাংস ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অপরদিকে প্রাণিজ পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হাঁসের খামারগুলো।

সাধারণত হাওরাঞ্চল, খাল-বিল-ডোবায় হাঁস পালনে খরচ তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে হাঁস ও ডিমের দাম বেশি হওয়ায় শান্তিগঞ্জ উপজেলায় হাঁসের খামারে আগ্রহ বাড়ছে কর্মস্থানহীন মানুষদের। উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে খামার ও খামারির সংখ্যা। এতে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার দেখার হাওরসহ ছোট-বড় প্রতিটি হাওর, খাল-বিল ও ডোবায় দলবেঁধে ছুটছে হাঁসের পাল। পিছনে পিছনে হাঁসকে নিয়ন্ত্রনে ছুটছেন খামারি। বাড়ির খালি ভিটায়, বাড়ি সংলগ্ন খালের তীরে, উঁচু সড়কের পাশে, হাওরের উঁচু জায়গায় ছোট-বড় হাঁসের খামার স্থাপন করেছেন খামারিরা। প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে এর সংখ্যা। হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই। খামারের হাঁস মূলত হাওরের জলজ কীট-পতঙ্গ, ঘাস, শামুক ও ছোট মাছসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য খায়। বর্ষাকালে হাওরের পানিতে এসব খাদ্য বেশি পাওয়া যায়। এতে হাঁস পালনে খরচ কম হয়ে থাকে। কয়েকজন খামারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংক ঋণ ও নিজের জমানো স্বল্প টাকা দিয়েই প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিলেন হাঁস পালন। শুরু করেন ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াই। হাঁস পালনে সাফল্যের মুখ দেখায় ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে তাদের। তাদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই আসছেন এ পেশায়।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসসূত্রে জানা যায়, উপজেলার পূর্ব পাগলা, পশ্চিম পাগলা, পূর্ব বীরগাঁও, পশ্চিম বীরগাঁও, দরগাপাশা, জয়কলস, পাথারিয়া ও শিমুলবাঁকসহ ৮ টি ইউনিয়নে হাঁসের খামার আছে প্রায় ৪০০টি।

এসব খামারে প্রায় ২ লাখ হাঁস রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ডিম দেয় এসব হাঁস। এতে ডিমের চাহিদা পূরন হয় এ উপজেলার মানুষের।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ইনাতনগর গ্রামের খামারি আপন দুই ভাই শাহিন মিয়া ও বুরহান উদ্দিন। তারা জানান, আমরা দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে এ পেশায় রয়েছি। ২-৩ হাজার হাঁস আমাদের খামারে নিয়মিতই পালন করে থাকি। হাঁস পালন করে প্রাপ্ত আয় থেকেই সংসার চলে। বছরে মোটামোটি কিছু টাকা জমাও করতে পারি। আগে হাঁস পালন করতাম, এখন পাইকারী দরে হাঁস কেনাবেচাও করি। এটাই আমাদের প্রধান পেশা। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখন হাঁস ও ডিমের দাম ব্যাপকহারে বেড়েছে। আমাদের আয় পূর্বের চেয়ে বেড়েছে। সেই সাথে নতুন নতুন খামারিও বাড়ছে বলে জানান তারা।

একই ইউনিয়নের নবিনগর গ্রামের খামারি জাবেদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এবার ৩০০টি ডিম দেওয়া হাঁস পালন করছি। এখন প্রতিদিন ১০০ হাঁস ডিম দিচ্ছে। কিছুদিন পর ডিম দেয়ার সংখ্যা আরও বাড়বে। এখন সপ্তাহে ৮ হাজার টাকার বেশি ডিম বিক্রি করছি। হাঁসের ডিম বিক্রি করে নিজের সংসার খুব ভালোভাবেই চলছে। সংসারের খরচের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ করেও অনেক টাকা আয় করতে পারছি।

পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের খুদিরাই গ্রামের তমিজুল ইসলাম বলেন, ৫০০ টি ডিম দেওয়া হাঁস কিনেছি। এখন প্রায় অর্ধেকর মতো হাঁস ডিম দিচ্ছে। আগে অন্য পেশায় থেকেও আমার আর্থিক উন্নতি হচ্ছিল না। তাই এ পেশায় এসে আমার আর্থিক সচ্ছলতা আসছে। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে কোনও সহযোগিতা পাচ্ছি না। হাঁসের রোগ হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করেও কম দামে ভ্যাকসিন পাই না। পাশাপাশি হাঁস পালনে কোনো পরামর্শও তাদের থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম।

একই গ্রামের আবু তৈয়ব বলেন, ১ হাজার ৫০০ টি হাঁস কিনেছি। হাঁস ডিমও দিচ্ছে। সামনের মাসে ডিম আরও দিবে। এধরনের হাঁস পাঁচ মাস লালনপালন করে বিক্রি করা যায়। এ মৌসুমে খরচ কম হয় হাঁস লালনপালনে। হাঁসের খামার করে আমার জীবনে আর্থিক পরিবর্তন হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও এগিয়ে যাবে হাঁস খামারের ব্যবসা। তবে হাওরে কিছু খাল-ডোবা লিজ দেওয়া না হলে হাঁসের খামার আরও বেড়ে যেত।

এ বিষয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুবায়ের হোসেন বলেন, হাওর এলাকায় হাঁসের খামার আশির্বাদ হতে পারে। সম্প্রতি জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় একটা হাওরকে শুধুমাত্র হাঁস পালনে উন্মুক্ত করে রাখার। আমরা শান্তিগঞ্জে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কোন হাওরে হাঁস পালন করতে উন্মুক্ত করা হবে সেটা কিছুদিনের মধ্যে সবাইকে জানাব। এটা বাস্তবায়নে কাজ করছি। তবে এ উপজেলায় হাঁস পালনে খামারিদের সচেতনতা কম। তাদেরকে আমরা সচেতন করতে কাজ করছি। শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস খামারিদের কম মুল্যে ভ্যাকসিন সুবিধা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।


Spread the love
এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: আইটি ঘর

© All rights reserved © সুনামগঞ্জ প্রতিদিন
Theme Customized BY LatestNews
error: Content is protected !!