1. newsjibon@gmail.com : adminsp :
শান্তিগঞ্জে ডাঙায় নৌকা, কর্মহীন ৯'শ শ্রমিক - সুনামগঞ্জ প্রতিদিন
শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫২ অপরাহ্ন

শান্তিগঞ্জে ডাঙায় নৌকা, কর্মহীন ৯’শ শ্রমিক

  • মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩
  • ১৫০ বার পঠিত
Spread the love

নোহান আরেফিন নেওয়াজ, শান্তিগঞ্জ:  সুনামগঞ্জ জেলার  শান্তিগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের বুক চিরে বয়ে চলেছে পিয়াইন নদী। এই নদীর দুই কূলের ডাঙাতে অথবা নদীন অল্প পানিতে বাঁধা বা অর্ধ নিমগ্ন অবস্থায় পরে আছে তিন শতাধিক যাত্রীবাহী নৌকা। জৈষ্ঠ্যের এমন দিনে বজরা, ছইয়া, ছাদখোলা ইত্যাদি নৌকা যাত্রী নিয়ে পাথারিয়া বাজার থেকে ভাটিপাড়া-বাংলা বাজার রুট আর হাওরের বুকে ধাপিয়ে বেড়ানোর কথা থাকলেও এখনো নৌকাগুলো শুকনায় পরে আছে। নৌকার কাঠ শুকিয়ে যাচ্ছে জৈষ্ঠ্যের দাবদাহে। এতে যেমন কষ্ট আর দুর্ভোগ বাড়ছে এসব এলাকার যাত্রী সাধারণের তেমনি কর্মহীন হয়ে আছেন ভাটিপাড়া, মুরাদপুর, আলীনগরসহ এসব এলাকার প্রায় নয় শতাধিক নৌকা শ্রমিক। দুর্দিনে সময় পার করতে হচ্ছে এসব শ্রমিকদের পরিবারকেও। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় মুরাদপুরের একাধিক নৌকা শ্রমিক জীবন ও জীবিকার তাগিদে সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন সিলেটসহ রাজধানী ঢাকায়। হাওর-নদীতে পানি না থাকায় এই এলাকায় এখনো নৌকা চলাচল শুরু হয়নি। নৌকায় চলাচল করতে না পারায় বাধ্য হয়েই যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে সড়ক পথে। পাথারিয়া-ভাটিপাড়া-আলীনগরের সড়কপথকে মৃত্যুর ফাঁদ বললেও ভুল হবে না। প্রায় প্রতিদিনই এ সড়কে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য বছর বৈশাখ মাস থেকেই আমরা নৌকায় চলাচল করতে পারি। পাথারিয়া বাজার থেকে প্রায় ৩শ নৌকা চলে ভাটিপাড়া, মুরাদপুর, বাংলাবাজার ও আলীনগরসহ এই সমস্ত এলাকায়। প্রতিটি নৌকায় ৩ জন করে নৌকা শ্রমিক থাকেন। দিন শেষে নৌকার খরচপাতি শেষে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা উপার্জন করে বাড়ি ফিরেন তারা। এই উপার্জনে ভালোভাবেই চলতো তাদের সংসার। কিন্তু এ বছর পানি না হওয়ায় জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ সময়েও হাওর বা নদীতে নৌকা ভাসানো যায়নি। এতে চালচলের ক্ষেত্রে স্থানীয়রাই বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
তারা জানান, শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া বাজার থেকে ভাটিপাড়া বাজার, মধুরাপুর (মর্দাপুর) বাজার, বাংলা বাজার, মুরাদপুর বাজার, আলীনগরের ঘাটসহ প্রায় ১০/১৫টি ঘাটে যাত্রী নিয়ে যায় নৌকাগুলো। এসব জায়গা থেকে অনেক যাত্রী আসেন পাথারিয়া। যাত্রী প্রতি ভাড়া দিতে হয় ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। মালামাল বহনেও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে ভাটিপাড়া-মুরাদপুরে যেতে চলে যাত্রীপ্রতি ১শ টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। এছাড়া, প্রতিটি মোটরসাইকেলে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চালকসহ ৩/৪জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। রাস্তার অবস্থাও একেবারে বেহাল; বলে বুঝানোর মতো না। কর্মহীন হয়ে পড়ায় অনেক শ্রমিক পরিবারসহ শহরে পাড়ি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কর্মহীন হয়ে সপরিবারে বাড়ি ছেড়েছেন মুরাদপুর গ্রামের এমন তিনজন নৌকা শ্রমিকে সন্ধান পান এ প্রতিবেদক। তারা হলেন মৃত রাহাত উল্লাহর ছেলে গোলাপ নূর, ইজাজুল ইসলামের ছেলে ফয়জুল হক এবং অপর শ্রমিক আবুল হাসান। মুঠোফোনে কথা হয় আবুল হাসানের সাথে। তিনি জানান, আমি একজন নৌকা শ্রমিক। বছরের ছয়মাস নৌকায় যাত্রী বহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। আমার নিজেস্ব নৌকা না থাকায় প্রতি বছর ছয়মাস চুক্তিতে নৌকা ভাড়ায় আনি। এ বছরও ৭০হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া করেছি। স্থানীয় ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলে, ধারদেনা করে নৌকা নিয়েছিলাম। এখনো নদী-হাওরে পানি আসেনি। পিয়াইন নদীতে নৌকা ডুবিয়ে পরিবার নিয়ে সিলেটে আছি। দিনমজুরি করে কোনো রকমে চলছি। আমাদের দুঃখের শেষ নেই৷ আমার মতো আরো অনেকেই আছেন।

মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল খালিক ও আলীনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহবুব বলেন, আমরা সীমাহীন দুর্ভোগের মাঝে আছি। রাস্তা ভাঙ্গা, মোটরসাইকেলের ভাড়া বেশি। পানি হলে নৌকায় করে আমরা খুব সহজেই চলাচল করতে পারি, খরচও কম। এ রাস্তায় প্রতিদিন কোনো না কোনো সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। পানি না আসা পর্যন্ত আমাদের শান্তি নেই।
নৌকা শ্রমিক আবদুল মতিন বলেন, আমরা সাধারণ শ্রমিক। সারা বছরে আমাদের একটা লক্ষ্য থাকে বর্ষা মৌসুমে কিছু আয় রোজগার করে সুখে-শান্তিতে বছর কাটাবো। কিন্তু এ বছর তা হচ্ছে না। জৈষ্ঠ্যমাসও প্রায় শেষ। এখনো নদীতে পানি আসে নি। আমরা এখন একদম বেকার সময় কাটাচ্ছি। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, বেকার হওয়া শ্রমিকদের নামের তালিকা পেলে আমরা কিছু একটা করার চেষ্টা করবো।


Spread the love
এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন

© All rights reserved © সুনামগঞ্জ প্রতিদিন
Theme Customized BY LatestNews
error: Content is protected !!