শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাজ গ্রামের মসজিদে কাঁঠাল নিলামকে কেন্দ্র দু’পক্ষের সংঘর্ষে আরো ১ জন মারা গেছেন। নিহত মুখলেছুর রহমান (৬০) হাসনাবাদ গ্রামের মালদার পক্ষের মৃত আজির মোহাম্মদের ছেলে।
সোমবার (১০ জুলাই) সকালে সংঘর্ষে আহত হয়ে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গ্রেফতার আতংকে আত্মগোপনে ছিলেন। সোমবার রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে মারা যান তিনি। মুখলেছুর রহমানের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শান্তিগঞ্জ থানার ওসি মো. খালেদ চৌধুরী।
এর আগে সোমবার সংঘর্ষে আরো ৩ জন মারা যান। এনিয়ে উভয় পক্ষের দু’জন করে মোট ৪ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। সোমবার নিহতরা হলেন, হাসনাবাদ গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল হক (৪২), আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া (৫০) ও আব্দুল বাসিরের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৪৫)। এদের মধ্যে মো. শাহ জাহান ও সর্বশেষ মারা যাওয়া মুখলেছুর রহমান মালদার পক্ষের লোক এবং বাবুল মিয়া ও নুরুল হক একই গ্রামের দ্বীন ইসলাম পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
এদিকে, তুচ্ছ ঘটনায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৪জন নিহত হওয়ার ঘটনায় হাসনাবাদ গ্রামসহ গোটা উপজেলায় শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। সংঘর্ষের পর থেকে উভয় পক্ষের পুরুষ সদস্যরা পুলিশের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গোটা গ্রাম এখন কার্যত পুরুষশূণ্য অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে গতকাল (সোমবার) সংঘর্ষে নিহত তিনজনের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এবং সর্বশেষ নিহত মুখলেছুর রহমানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৭ জুলাই) জুম্মার নামাজের পর মসজিদের একটি কাঁঠার নিলামে তুলা হয়। নিলামে অন্যান্যদের সাথে অংশগ্রহণ করেন এই গ্রামের মালদর পক্ষের শেখ মিয়া, খচরু মিয়া ও মইনুর ইসলাম। এদের মধ্য খচরু মিয়া কাঁঠালটি কিনে নেন। কাঁঠাল নিলামের পর দ্বীন ইসলাম পক্ষের আবদুল বাহার বলেন কাঁঠালটি আরও বেশি দামে বিক্রি হতে পারতো। তাছাড়া সেই নিলামের ডাকের কথা শোনা যায়নি বলেও অভিযোগ করেন একপক্ষ। এ নিয়ে ক্রেতা খচরু ও বাহারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে গত দু’দিন ধরে গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মিলে তাদেরকে ঝগড়াঝাটি থেকে বিরত থাকতে একাধিবার বুঝিয়েছেন। তারা তা বুঝেন নি। ঘটনার আগেরদিন রাতে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল বাসিত সুজন হাসনাবাজ গ্রামে এসে দুই পক্ষকে বিচার শালিস মানিয়ে যান। ঘটনার দিন সকালেও তিনি এসেছিলেন এবং উভয় পক্ষকে বুঝিয়েছেন। বিচার শালিস মেনে নেওয়ার পরও সোমবার সকাল ১১টায় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪ জন মারা গেছেন। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে উভয়পক্ষের ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না । থানায় এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন