দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের একাডেমিক ভবণ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত মেয়াদ ছিলো (৫৪০ দিন) দেড় বছর। কিন্তু প্রতিষ্টানটির কাজ শুরুর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগেই থমকে যায়। এটির কাজ শেষ করতে আরও কত সময় লাগবে, এনিয়ে স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। তবে কারিগরি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে প্রতিষ্টানটির অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় প্রথম সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের ধীরগতির কারনে স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিলম্বিত হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এই অঞ্চলের স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সাইডিং সংলগ্ন হিজল তলায় ‘দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ’ নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক। সরকারি কারিগরি বিভাগের এই প্রতিষ্টান নির্মানে দরপত্র অনুযায়ী পাঁচ তলা একাডেমিক কাম চারতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মানের সাথে ওয়ার্কশপ ও একতলা সার্ভিস এরিয়াসহ পয়ঃনিস্কাসন, বিদ্যুতায়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের ব্যবস্থা করন, বাউন্ডারী ওয়াল, অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং গভীর নলকুপ স্থাপনের কাজ করা কথা রয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের অধীনে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ টাকার মুল্যমানের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় ময়মনসিংহ জেলার ‘ভাওয়াল কন্সট্রাকশন’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। উপজেলার সর্ব প্রথম একমাত্র সরকারী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণকে ঘিরে স্থানীয় শত শত শিক্ষার্থী নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ের নানা টাল বাহানায় কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার অতিরিক্ত আরও প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। নির্মাণ কাজের নির্ধারিত মেয়াদের সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও এখন কাজ চলছে ধীর গতিতে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের লোকজন বলছেন, সংক্রামক ব্যাধী করোনার কারনে প্রায় ১৮ মাস পূরোপুরি নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিলো, এরপর গত বছরে দু’দফা বন্যার কারনে আরও ৪ মাস কোন কাজ করা যায়নি। বর্তমানে অসমাপ্ত কাজ চলছে দ্রুত গতিতেই।তবে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঠিকাদার নিজে না এসে তার প্রতিনিধির মাধ্যমে দায়সারা ভাবে প্রতিষ্টানটির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে শুরুতেই কাজের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কাজের মানের বিষয়ে স্থানীয় লোকজন কোনো কথা বললেই চাঁদাবাজির মামলার ভয় দেখানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানে বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয় নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকলেও তাদের নিয়মিত কাউকেই সরেজমিনে দেখভাল করতে দেখা যায় না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম, সফিক মিয়াসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে এখানকার অনেক শিক্ষার্থীরা আগ্রহী। সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের নির্মাণ কাজের ধীরগতিতে আমরা হতাশ। যাদের সামর্থ্য আছে তারা জেলা ও বিভাগীয় শহরের বাইরে অন্যত্র কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছে। বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা। শিক্ষার্থীদের সুবিধার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানাচ্ছি। নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্টানের প্রকৌশলী সুহেল দাশ বলেন, সংক্রামক ব্যাধী করোনা ভাইরাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিষ্টান নির্মানের কাজ বিলম্বিত হয়েছে। আগামী মার্চ মাসে প্রতিষ্টানে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর জন্য জরুরী ভিত্তিতে ২য় তলায় ৫টি কক্ষ তৈরী করা হচ্ছে। দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু বলেন, প্রতিষ্টানটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটা জটিলতা ছিলো। সম্প্রতি সকলকে নিয়ে এটির নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বন্যা ও করোনায় দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিলো। আশা করছি, প্রতিষ্টানটির অসম্পূর্ন কাজ দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ের প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, বর্তমানে প্রতিষ্টানটির প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিষ্টানের পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে এরই মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়োগও দেওয়া হয়েছে, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন