প্রতিদিন প্রতিবেদক:
টাঙ্গুয়া হাওর পাড়ের শিশু শিল্পী ফারজিনা হাওর পাড়ের মানুষের জীবন – জীবীকার কঠিন সংগ্রামের দৃশ্যপটে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। এই অর্জনে তার সহপাঠি সহ হাওর পাড়ের মানুষদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কি হাওর পাড়ের সাধারণ মানুষ না বুঝলেও তারা এটা বুঝেছে যে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সে পুরস্কার নিয়েছে এবং ছবি তুলেছে। অনেকেই দরিদ্র পরিবারের এই শিশুটিকে ভাগ্যবান বলে মনে করছেন। তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। নেতাকর্মী, প্রশাসন সহ তাকে অনেক নেটিজেনরা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
ফারজিনার বাবা আবু সায়েম ও মা আফিয়া জানান, ফারজিনা কোন দিন সুনামগঞ্জ জেলা শহরেই যায়নি। স্বপ্নেও ভাবিনি সে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে এবং রাজধানী ঢাকায় গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরষ্কার নিবে এবং ছবি তুলবে। তার প্রাতিষ্টানিক কোন অভিনয় অভিজ্ঞতা নেই। হাওরের পাড়ে থেকে বড় বড় ঢেউ ও দূর্যোগ দেখে দেখে সে বড় হয়েছে।
তার শিক্ষক হাদিউজ্জামান বলেন, শিশুটি অনেক মেধাবি কিছু শিখিয়ে দিলে সে সহজেই শিখতে পারে। পরিবারটি অভাব অনটনে থাকায় সে দূরে কোথাও ভর্তি হতে না পেরে গ্রামের স্কুলেই ভর্তি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে স্কুলের চারদিকে প্রবল ঢেউ এবং পানি থাকে। তখন ঢেউয়ের মধ্যে ফারজিনা সহ গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে। তখন আমরা খুব ভয়ে থাকি।
জানা যায়, হাওর পাড়ের মানুষের জীবন – জীবীকার কঠিন সংগ্রামের দৃশ্যপট নিয়ে পরিচালক মুহাম্মদ কাইয়ুম ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওড়াঞ্চল টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ে – ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার প্রাক – প্রযোজনা শুরু করেন এবং ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত চিত্রগ্রহণের কাজ করেন। পরে টাঙ্গুয়া হাওর এলাকায় শুটিং লোকেশন দেখতে যান পরিচালক মুহাম্মদ কাইউম। সেখানে একটি বাড়ি শুটিংয়ের জন্য পছন্দ করেন পরিচালক। বাড়িটি ছিল ফারজিনার নানার । আর সে সময় ফারজিনাকে দেখে পরিচালকের শিশু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পছন্দ করেন। তখন ফারজিনার বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। শুরুতে রাজি না হলেও পরে অসাধারণ অভিনয় করে ফারজিনা। তাকে শিখিয়ে দিলে সে অনুযায়ী অভিনয় করে। সে তখন জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফারজিনার বাবা আবু সায়েম তাহিরপুর উপজেলার ছিলানি তাহিরপুর গ্রামের একজন কৃষক। মা আফিয়া আক্তার সাদামাটা গৃহিণী। ফারজিনা আক্তারের ২ বোন ১ ভাই।
অভাবে পরে তার বাবা নিজেদের বাড়িটি বিক্রি করে দেন। তার পর থেকে নানা শাহপরানের বাড়ির একটি কুড়ে ঘরে থাকে । এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শিল্পীরা পেশাদার ছিলো না, তারা থিয়েটারে কাজ করত। কোন রকমের প্রাতিষ্ঠানিক অভিনয় শিক্ষা ও নুন্যতম প্রশিক্ষণ ছাড়াই সরকারি অনুদান প্রাপ্ত ছবি কুড়া পক্ষির শূন্যে উড়া ছবিতে ফারজিনা শিশু শিল্পী হিসেবে অনবদ্য অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, অভাব অনটন দারিদ্র্য কোনটি শিশুদের মেধা বিকাশের অন্তরায় হতে পারে না। ফারজিনা এটি প্রমাণ করে দিয়েছে। এই হাওর পাড়ে অসংখ্য প্রতিভাবান শিল্পী আছে, সুযোগ পেলে তারাও তাহিরপুরের জন্য সম্মান বয়ে আনবে নিঃসন্দেহে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: আইটি ঘর