দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারাবাজারে মৌসুমি ফল লিচুর ফলনে হতাশ হয়েছেন স্থানীয় লিচু চাষিরা। খরা ও অতিরিক্ত তাপদাহে পাহাড়ি এ অঞ্চলের লিচু চাষিরা কাংখিত ফলন পাননি। মৌসুমের এই সময়ে বাজারগুলোতে লিচুতে পরিপূর্ণ থাকার কথা থাকলেও এবার তা হয়নি। ফলে কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জানা যায়,ছাতক-দোয়ারাবাজার দুই উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ২০-২৫ বছর ধরে বানিজ্যিক ভাবে লিচুর চাষ করা হয়। ওই এলাকার লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে খুব কম বিক্রির জন্য পাঠানো হলেও দেশীয় প্রজাতীর এই লিচু সিলেট ও সুনামগঞ্জে এর চাহিদা ব্যাপক। এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু দিয়েই সুনামগঞ্জের মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছেন।
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ছাতক-দোয়ারাবাজারসহ স্থানীয় হাট বাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচুর বিক্রি শুরু হয়েছে। ছাতক-দোয়ারাবাজার দুই উপজেলার স্থানীয় বিভিন্ন হাটে এখানের উৎপাদিত লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি হয় প্রতিদিন । বর্তমানে এ অঞ্চলের উৎপাদিত ১০০ লিচু ২০০থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চাঁনপুর,রাজারগাঁও,বড়গল্লা এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া টেংরাটিলা ও পাইকপাড়া গ্রামে রয়েছে লিচুর বাগান। এখানের উৎপাদিত লিচু আকারে ছোট হলেও দেশীয় প্রজাতীর এ লিচু খুবই মিষ্ট।
ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত নোয়ারাই ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর গ্রাম। একটু এগুলেই দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া গ্রাম। মানিকপুর এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার শতাধিক পরিবার। বর্তমান সময়ে এই এলাকার বাগানগুলোতে দেশীয় জাতের পাকা রসালো ফল লিচুর ছড়া গাছে-গাছে ঝুলছে। যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। লিচু বাগান দেখতে আসা এখানে দর্শনার্থীদের ভীড় ও কম নয়। লিচু চাষী আবু তাহের জানান, চারা রোপনের তিন বছরের মধ্যে লিচু ধরা শুরু হয়। একটি বড় গাছের লিচু বিক্রি করে বছরে ২০ থেকে ৩০হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। যা অতিথে হয়েছে।
এদিকে লিচুর গ্রাম নামে পরিচিত মানিকপুরের সাথে ছাতক -দোয়ারাবাজারের সড়ক যোগাযোগ অত্যন্ত নাজুক। ফলে চাষীরা এ অঞ্চলে তাদের উৎপাদিত লিচু সঠিক সময়ে বাজার জাত করতে পারছেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় এখানের উৎপাদিত লিচু কম খরছে বাজারে পাঠাতে পারছেন না বলে দিনদিন লাভের সংখাটাও কমে আসছে বলে তারা জানান।
লিচু চাষি ফরহাদ মিয়া বলেন, গত বছর লিচুর ফলন ভালো হয়ে ছিলো। কিন্তু প্রলয়নকারী বন্যায় তা আর বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। আশা ছিলো এবছর লিচু বিক্রি করে গত বছরের লোকশান পোহাব। চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত খরার কারণে অন্যান্য বছরের মতো লিচুর ফলন হয়নি। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকের কম লিচুর ফলন হয়েছে। অনেক গাছে লিচু একদমই আসেনি। আর যা ফলন হয়েছে আকারে ছোট।
তিনি আরোও জানান,কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে যদি তাদেরকে লিচু চাষে সহযোগিতা করা হয় তাহলে তারা লিচু চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে। তাছাড়া,রাস্তার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে লিচু বাজারে নিতে কম খরচ হবে,বাহিরের পাইকাররা ও এলাকায় লিচু কিন্তু আসবে। এতে করে এলাকার মানুষ স্বাবলম্বী হবে।
পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন,ছাতক উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মানিকপুর। মানিকপুরের লিচু সিলেট অঞ্চলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিলো পরিবার পরিজনদের নিয়ে মানিকপুর এসে নিজ হাতে লিচু পেরে খাবো।এসেছি লিচু খেতে,আলহামদুলিল্লাহ লিচু খেয়েছি। তবে আশানুরূপ লিচু চোখে পড়েনি। এখানকার লিচু চাষিদের কাছ থেকে জানলাম আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবছর লিচু ফলন অন্যবছরের চেয়ে কম হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে যদি লিচু চাষিদেরকে নিয়ে প্রতিবছর লিচু চাষের উপর পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা মূলক সভার আয়োজন করা যায় তাহলে কৃষকরা অনেক কিছু জানতে পারবে ও লিচু চাষে তাদের আগ্রহ বাড়বে। তিনি আরও জানান,সুনামগঞ্জ জেলার বৃহত্তম লিচুর বাগান মানিকপুর, এই গ্রামটি টিলাবেষ্টিত হওয়ায় লিচু বাগান গুলোতে একটি পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে মানুষজন এখানে আসবে ও মানিকপুর গ্রাম একটি বানিজ্যিক ও পর্যটন শিল্পে পরিনত হবে। এতে এলাকার অর্থনীতির গতি সামনের দিকে নিয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক বছর মে মাসের শুরু থেকে গাছে গাছে পাকা লিচুর সমারোহ হয়ে থাকে। সারা বছর পরিচর্যা করার পর ঠিক এই সময়টিতে লিচু কিনতে আসেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। চাহিদা থাকায় ছাতক-দোয়ারাবাজারে বেড়েছে লিচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই এলাকার লিচু এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে । তবে এবার খরা আর তীব্র তাপপ্রবাহে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম লিচু ফলন হয়েছে।
ছাতক উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মহসিন আলী জানান, লিচু চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। লিচুর ফলন ভালো রাখার জন্য সরকার থেকে অনেককে সৌরবিদ্যুৎতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন কিছুটা কম হলেও চাষীরা পাচ্ছেন ভালো বাজার মূল্য। টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সকল সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: আইটি ঘর