প্রতিদিন প্রতিবেদক : টাকা ছাড়া জন্মনিবন্ধন হয়না সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নে। এ অভিযোগ প্রবাসী এক ভূক্তভোগীর। ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বলার পীরপুর নিবাসী যুক্তরাজ্য প্রবাসী লাল মিয়া ও তার পরিবারবর্গরা জন্ম নিবন্ধন করার জন্য কালারুকা ইউনিয়নে গিয়ে দফায় দফায় হয়রানীর শিকার হন। প্রবাসী লাল মিয়া বলেন,আমার নিজের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের জন্ম নিবন্ধনের জন্য গেলে ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো.আব্দুল আউয়াল বলেন,প্রতিটি জন্ম নিবন্ধনের জন্য ২ হাজার করে টাকা ইউপি সচিবকে দিতে হবে। লাল মিয়া রসিদ ছাড়া টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তার ছোট ছেলে বৃটিশ ক্যাবিনেটে কর্মরত কবিরুল ইসলাম,গ্রামের মেম্বারের মাধ্যমে টাকা দিয়ে জন্ম নিবন্ধন নিতে সক্ষম হন। কিন্তু প্রদত্ত জন্ম নিবন্ধন সনদে ভূল তথ্য উল্লেখ করেন সচিব।
জন্মস্থান ইউনাইটেড কিংডম না লিখে সুনামগঞ্জ লিখে ইচ্ছেকৃতভাবে ত্রæটি করেন তিনি। জন্ম নিবন্ধন করতে জেলা সিভিল সার্জনের প্রত্যয়ন আনার জন্য টাকা লাগে বলে অন্যায় অজুহাতে টাকা গ্রহন করে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু চাহিতো টাকা দেওয়ার পরও সময় ক্ষেপন করেছেন দীর্ঘদিন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পিংকু দাস বলেন, প্রবাসী লাল মিয়া জন্ম নিবন্ধন নেওয়ার জন্য আমার কাছে আসেননি। তাই তাঁর কাছে টাকা চাওয়ার বা নেওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। সচিব বলেন, জন্ম নিবন্ধন দেওয়ার বেলায় আমরা টিকা কার্ড,প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সনদপত্রসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাগজপত্র দেখি। কিন্তু অনেক প্রবাসী আছেন তারা কোন কাগজপত্রই দিতে পারেননা। প্রবাসী লাল মিয়া ও তার পরিবারের কিছুই নেই,তারা বৃটিশ নাগরিক। এ কারণে জন্ম নিবন্ধন গ্রহনের বেলায় তাদেরকে ডাক্তারের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা রাজীব চক্রবর্তীর কাছ থেকে প্রত্যয়ন এনে দুইটি জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছেন। এই সনদগুলো মেম্বার সাহেব নেন। আমি কাউকে সনদ দেইনি কারো কাছ থেকে টাকাও নেইনি।
৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো.আব্দুল আউয়াল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ফি মাত্র ১০০ টাকা। প্রবাসী লাল মিয়া এ পর্যন্ত ৩টি জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছেন। প্রথমে তিনি তার প্রবাসী ছেলে কামরুল ইসলামের নামে জন্ম নিবন্ধন সনদ নেন। ঐ সময় আমাকে খরচ বাবত মাত্র এক হাজার টাকা দেন। টাকা নেওয়ার মূল কারন হলো কামরুল ইসলামের বাংলাদেশী পাসপোর্ট নেই। কোন বৈধ কাগজপত্র বলতে কিছুই নেই। আমি আমার পরিচিত একজন ডাক্তারের প্রত্যয়ন নিয়ে প্রথমে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ করে দেই। এই কাজের জন্য ছাতক উপজেলা সদরে আমাকে ৪/৫ বার যেতে হয়েছে। তাই খরচ বাবত আমি প্রথমে এক হাজার টাকা নিয়েছি। ২য় দফায় সাইফুল ইসলাম ও লাল মিয়ার স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধন বাবত কম্পিউটার খরচ হিসেবে সচিবরে দিছি ৫০০ টাকা,আমার খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা।
দুটি জন্ম নিবন্ধন সনদ লাল মিয়ার ভাই আজিজ মিয়ার কাছে আমি হস্তান্তর করেছি তারা আমাকে একটি টাকাও দেননি। এই জন্ম নিবন্ধনের জন্য তারা ডাক্তারী প্রত্যয়নপত্র দিতে পারেননি। পরে এমপি সাহেবকে বলে ডাঃ রাজীব চক্রবর্ত্তীর কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়েছে। এখন তারা আমার পাওনা না দিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। মেম্বার মো.আব্দুল আউয়াল বলেন,আমি ৩ বারের নির্বাচিত মেম্বার। সবার কাজই সহজভাবে সম্পন্ন করে দেওয়া আমার দায়িত্ব। তাই বলে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে প্রবাসীদের অন্যায় দাবী পূরন করবো এটাতো হতে পারেনা।
কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.অদুদ আলম বলেন,বিষয়টি আমি সবেমাত্র জানলাম। তবে আমার মেম্বার সচিবের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের কাজ করে বিভিন্ন সময় লোকজনের কাছ থেকে বেনেফিট নেয়। এ বিষয়টি আমি জানার পর আমার মেম্বারকে নিষেধ করেছি যাতে কারো কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা গ্রহন না করে। এ ব্যাপারে মেম্বার বা সচিবের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ হলে এর দায় দায়িত্ব তারা নেবে। কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদ কারো অনিয়ম দুর্নীতির দায় দায়িত্ব গ্রহন করবেনা।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: আইটি ঘর