চতুর্থ ধাপে সুনামগঞ্জের তিনটি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ বুধবার। উপজেলা তিনটি হচ্ছে- সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ ও নবগগঠিত উপজেলা মধ্যনগর। এ তিন উপজেলার মধ্যে জেলাবাসির দৃষ্টি নিবদ্ধ শান্তিগঞ্জ উপজেলার দিকে। এ উপজেলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি পুত্র, উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি সাদাত মান্নান অভি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, শান্তিগঞ্জের বাসিন্দা হাজী আবুল কালাম ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট বুরহান উদ্দিন দোলন। শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় নেতা আলহাজ¦ আব্দুস সামাদ আজাদ পুত্র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন। তিনি এম এ মান্নান এমপির ছেলের বিপরীতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালামকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে তাঁকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করেছেন এবং তার কর্মী বাহিনীকে কালামের পক্ষে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। আজিজুস সামাদ ডন সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের অন্যতম প্রতিপক্ষ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এম এ মান্নানকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে ছিলেন আজিজুস সামাদ ডন। পরবর্তীতে ২০১৮ ও ২০২৩ এর নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ^াসে নির্বাচন করেননি। তার সসমর্থকরা মনে করেন আগামী নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হবেন আজিজুস সামাদ ডন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে এম এ মান্নানের পর সামাদ আজাদ পুত্রই হবেন এ আসনের কান্ডারি। বিগত দুটি নির্বাচনে এরকম আশ^াস দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এম এ মান্নান পুত্র সাদাত মান্নান অভিকে ্উপজেলা নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে তিনি (মান্নান) আগামী এমপি প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুত করছেন-এমন গুঞ্জন চলছে সর্বত্র। এজন্য উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেন আজিজুস সামাদ ডন। এম এ মান্নানও পর্দার আড়ালে থেকে ছেলেকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। বাসায় বসে উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে বৈঠক করে ছেলেকে বিজয়ী করতে সহযোগীতা চেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা কায়দায় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। তবে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। এবার শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই হ্যাভিওয়েট নেতা দুই প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনে নামায় ভোট উৎসব জমে ওঠেছে। দু’জনেই এই ভোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আজিজুস সামাদ ডন বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত রয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকারের মন্ত্রী বা দলের এমপি’র আপন বা স্বজন কেউ দাঁড়াতে পারবে না। এখানে (শান্তিগঞ্জে) এই নির্দেশনা মানা হয় নি। এমএ মান্নানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একজন সারাজীবন পেয়েছেন, কিন্তু নেত্রীর সামান্য নির্দেশনা মানতে পারছেন না, এটি মেনে নেওয়া যায় না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমি মনে করেছি, আবুল কালাম দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মী, বৃহত্তর সদর উপজেলার (এক সময়ের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ বা শান্তিগঞ্জসহ) সে সভাপতি ছিল। সে হিসেবে আবুল কালাম-ই প্রার্থীদের মধ্যে পুরোনো-জ্যেষ্ঠ ও নিবেদিত কর্মী। এজন্য তার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছি আমি।
সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, আমার ছেলের উপর এলাকার মানুষের দাবি ও চাপ আছে, তাই সে নির্বাচন করছে। আমি কখনোই দলের নির্দেশনার অমান্য করি নি। আজীবন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনুগত কর্মী। আমি ভোটের মাঠে যাচ্ছি না। দলীয় নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকছি। আমি ঘরে থাকলেও মানুষ নিজেদের সমস্যা নিয়ে আসে, তদবির, সুপারিশ করাতে আসে। যতটুকু পারি সান্তনা দিয়ে দেই। আমি মন্ত্রী থাকার সময়ও সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়িতে এসেই থেকেছি। এখনও বাড়িতেই থাকি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সিদ্ধান্ত আমার কাছে আসে নি। এমনকি জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমেও কোন নির্দেশনা পাঠানো হয় নি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা সরেজমিন ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শান্তিগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তিনজন হলেও শেষ পর্যন্ত এখানে লড়াই হবে দ্বিমুখী। এমপি এম এ মান্নান পুত্র সাদাত মান্নান অভি (আনারস) ও আজিজুস সামাদ ডন সমর্থিত আবুল কালাম (মোটর সাইকেল) এর মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। বিজয়ের শেষ হাসিটা কে হাসেন সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৫জুন রাত পর্যন্ত।
এদিকে, মর্যাদার আসন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপল (মোটর সাইকেল), সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট মণীষ কান্তি দে মিন্টু (ঘোড়া) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ফজলে রাব্বী স্মরণ (আনারস) প্রতীক। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের পক্ষে জনমত ও ভোট আদায়ে দিন-রাত বিরতিহীন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এই তিনজনই হেভিওয়েট প্রার্থী। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল। তার পক্ষে গোটা উপজেলা জুড়ে কাজ করছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আ.লীগের একাংশের কর্মী বাহিনী। স্মরণের পক্ষেও রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ ও আ.লীগের একটা অংশ। যারা নেপথ্যে থেকে তার পক্ষে কাজ করছেন। এখানে শেষ পর্যায়ে যুবলীগ নেতা ফজলে রাব্বী স্মরণ ভোটের মাঠে বড় ধরনের প্রভাব ফেললে নির্বাচন ত্রিমুখী লড়াইয়ে রূপ নেবে। সেক্ষেত্রে বিগত উপজেলা নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী মণীষ কান্তি দে মিন্টু সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যেতে পারেন। আর দ্বিমুখী লড়াই হলে চপল থাকবেন সুবিধাজনক অবস্থায়। ভোটের মাঠ জরিপ করে এমনটাই বোঝা গেছে। অপরদিকে, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় প্রথমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তাঁরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন তালুকদার (দোয়াত-কলম),বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম (হেলিকপ্টার),উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রবীর বিজয় তালুকদার (আনারস), সজল কান্তি সরকার (ঘোড়া),আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়া (মোটর সাইকেল),সাইদুর রহমান (কাপ-পিরিচ), বরুণ কান্তি দাশ গুপ্ত (চিংড়ি), আব্দুল আউয়াল (শালিক পাখি)।
এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন চার প্রার্থী। তাঁরা হলেন, মো. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, প্রবীর বিজয় তালুকদার, মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূইয়া ও মো. সাইদুর রহমান। তবে শেষ পর্যন্ত চতুর্মুখী না হয়ে মো. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার (আনারস) ও মো. সাইদুর রহমান (কাপ-পিরিচ) এর মধ্যে দ্বিমুখী নির্বাচনী লড়াই জমে উঠতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন