বিশেষ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামে কাঁঠাল নিলাম নিয়ে সংঘর্ষের ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার চারদিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হয়নি। উভয়পক্ষের কেউই মামলা করতে থানায় আসেন নি। চারজন নিহতের পর হাসনাবাদ গ্রামের পুরুষরা গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রাম ছাড়া। গোটা গ্রাম পুরুষশূন্য। কে কোথায় আত্মগোপন করেছেন কেউই জানে না। নিহতদের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করেছেন আশপাশ গ্রামের লোকজন ও অন্যগ্রামে থাকা আত্মীয়স্বজন। তবে পুলিশ এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সন্ধেহভাজন ১৫জনকে আটক করেছে।গ্রামে এখনো পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রাত-দিন পালাক্রমে পুলিশ প্রহরা জারি রাখা হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী জামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ আহমদ বলেন, হাসনাবাজের পুরো গ্রামই এখন নীরব। মনে হয় কোনো মানুষ নাই। বাড়িঘর খালি। তবে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন আছে। নিহতদের লাশ দাফন করেছে আশপাশের গ্রামের মানুষজন।
হাসনাবাজ গ্রামের বাসিন্দা মকসুদ মিয়ার স্ত্রী রাজিয়া বেগম জানান,ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী ও দুই ছেলে বাড়িছাড়া। তাঁরা কোথায় আছে কিছুই জানি না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত সুজন বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিদিনকে বলেন, গ্রামের পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। গ্রামে এখনো পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের পর গ্রামে কোন পুরুষ মানুষ নাই। গোটা গ্রাম কার্যত পুরুষ শূণ্য। এ কারনে এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই থানায় মামলা করতে আসেনি। তুচ্ছ এক ঘটনায় চার-চারজন মানুষের মৃত্যুতে গ্রামটিতে নিরব-নিস্তব্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিদিনই গ্রামে গিয়ে সবার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিদিনকে অনাকাঙ্খিত এক ঘটনায় চার জন লোকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ঘটনাটিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখছে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযোগ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু দুই পক্ষের লোকজনই এলাকা ছেড়ে পলাতক। অভিযোগকারী পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখনো মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, সংর্ঘষের সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত উভয় পক্ষের ১৫ জনকে আটক করেছে। আসামী ধরতে অভিযান চলছে। বর্তমানে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৭ জুলাই) জুম্মার নামাজের পর মসজিদে দানকৃত একটি কাঁঠাল নিলামকে কেন্দ্র করে হাসনাবাজ গ্রামের দ্বীন ইসলাম ও মালদার আলীর পক্ষের লোকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে সোমবার সকাল ১১টায় সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে দুইজন ও স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে একজনসহ তিন জন নিহত হন। পরের দিন মঙ্গলবার আরও একজনের মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, গ্রামের দ্বীন ইসলাম গোষ্ঠী ও মালদার গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ২০০৬ সালের পর থেকে তাদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আদালতে ৭-৮টি মামালা বিচারাধীন রয়েছে। বিগত সময়ে ঈদের জামাতে সংর্ষের ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলাও রয়েছে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। কাঁঠাল নিয়ে সংঘর্ষ পূর্ব বিরোধ এবং অধিপত্য বিস্তারেরই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছে আশপাশ গ্রামের লোকজন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: জুনায়েদ চৌধুরী জীবন